December 23, 2024, 6:03 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
আজ ৭৭তম জন্মদিনে শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর যিইি হয়ে উঠেছেন বাঙালির একমাত্র স্বপ্নের সারথি। তলাবিহীন ঝুড়ির দুর্নাম ঘুচিয়ে দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ক্ষমতার মসনদকে পরিণত করেছেন সাধারণের ভরসাস্থলে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাকে করে তুলেছেন বাস্তব। উন্নয়নের সেই মহাকাব্যের প্রমিথিউস বাঙালির স্বপ্ন-সাহস-প্রেরণা এবং আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর, দূরদর্শী নেতৃত্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী উদাহরণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভ জন্মদিন শেখ হাসিনা।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীবিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি।
শেখ হাসিনার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে সংগ্রামগাথা। মাথা না নোয়ানোর সংস্কৃতি তৈরি করতে দিতে হয়েছে নিজের তাজা রক্ত। এই জীবনে ২০ বার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েও নিজেকে সাধারণের কাতারে নিয়ে গেছেন। সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন ত্যাগ করে সবসময় জড়িয়েছেন মানুষের ভালোবাসায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও অসীম সাহসে লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
দেশ যখন সামরিক জান্তার কবলে চরম অস্থিরতায়। আওয়ামী লীগ ক্রমান্বয়ে ছন্নছাড়া। সেই সংকটে হাল ধরেছিলেন উপমহাদেশের প্রাচীনতম এ দলটির। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, দলীয় কর্মীদের পাহাড়সম প্রত্যাশা এবং সাধারণের ভালোবাসাকে এক সুতায় বেঁধে ১৯৮১ সালে ত্রাতার ভূমিকা নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেই সংকটে সফলভাবে উতরে গিয়ে লড়াই করেছেন এরশাদ সরকারের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজপথে। মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত হলেও কর্মীদের ঢাল হয়েছিলেন সবসময়। ক্ষমতার মসনদকে চূর্ণবিচূর্ণ করে স্বাধীন বাংলাকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপ দিয়েছেন।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ওই বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ নেতাকর্মী আহত হন।
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান শেখ হাসিনা। দেশের চিরাচরিত ক্ষমতার ক্ষেত্রকে ভেঙে মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লড়াই শুরু করেছিলেন। ফের ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আরোহণ করে পূর্ণতা দেন সেই লড়াইয়ের। তার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট, করোনাকাল সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। নানা দুর্যোগেও সচল রেখেছেন দেশের অগ্রযাত্রা। তার সময়োপযোগী নেতৃত্ব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বদরবারেও।
শেখ হাসিনার দুর্নিবার নেতৃত্বে সাবমেরিন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। মাইলফলক স্পর্শ করেছে অসংখ্য অর্জনে। পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, চার লেন মহাসড়ক—একসময় যা মানুষের কাছে আফসোসের কারণ ছিল, সেই সেবাগুলো এখন মানুষের দোরগোড়ায়। এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হয়েছে। যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনা ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তথা রূপকল্প-২০৪১’ ঘোষণা দেন। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, কল্যাণকর ও নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জলবায়ুসহিষ্ণু বদ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘ডেলটা প্ল্যান-২১০০’—এ সবকিছুই উন্নত চিন্তার ফসল। আগামীর বাংলাদেশ কেবল দক্ষিণ এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের কাছেই রোল মডেল হয়ে উঠবে।
জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে শেখ হাসিনা বাবার সান্নিধ্য একটু বেশিই পেয়েছিলেন। দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক বাবাকে দেখেছিলেন খুব কাছ থেকে। সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ত্যাগ, দেশপ্রেমের পাঠ নিয়েছিলেন বাবার থেকেই। ফলে সারা জীবনে বিপৎসংকুল পথ পাড়ি দিলেও সততা থেকে বিচ্যুত হননি। নিজের পরিবারের সদস্যদেরও রেখেছেন সব পঙ্কিলতার ঊর্ধ্বে। পরিবারের সদস্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন সাতজনকে। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এ ছাড়া বোন শেখ রেহেনা ও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং দুই মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে প্রযুক্তিবিদ সজিব ওয়াজেদ জয় মায়ের তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা। তার পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনায়ই দেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ক্রমান্বয়ে ধাবিত হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শদাতা হলেও সজিব ওয়াজেদ জয় কাজ করেন অবৈতনিক। এমনকি রাষ্ট্র প্রদত্ত কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধাও তিনি গ্রহণ করেন না। এমন বিরল উদাহরণ তৈরি শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য বলেই সম্ভব। এ ছাড়া শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। অটিজম নিয়ে সারা বিশ্বে কাজ করছেন। দায়িত্ব পালন করছেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) দূত হিসেবে। মা দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও তিনি রাষ্ট্রের থেকে অতিরিক্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা নেন না। দেশ-বিদেশের অটিজম শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। মেধা ও যোগ্যতায় দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন সাধারণে অসাধারণ। এ ছাড়া শেখ হাসিনার বোন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহেনা। তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির দেখভাল করছেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধায় নিজেকে জড়াননি। মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিক। এর মধ্যে টিউলিপ যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির জনপ্রিয় রাজনীতিক। বারবার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন।
পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করেছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে। ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের অনেক সদস্যই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে থাকেন। অস্বাভাবিক আয়ের ন্যূনতম প্রমাণ পেলে এসব দেশের সরকার তা ফলাও করে প্রচার করত। কিন্তু পারেনি। কারণ শেখ হাসিনা পরিবারের প্রত্যেক সদস্য সততায় একনিষ্ঠ। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায়ই ঘোষণা করা হয়েছে ভিসা নীতি। হুমকি দেওয়া হয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের। দৃঢ়চেতা প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে বসেই এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন। প্ররোচিত হয়ে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণেও এমন প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি দেখা গেছে তার কণ্ঠে।
এসব দৃঢ়চেতা বক্তব্য ও পদক্ষেপ দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন দুঃসাহসের পেছনে প্রধান কারণ প্রধানমন্ত্রীর অসীম সহাস, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, অভিজ্ঞতা ও তার সততা। পাশাপাশি তার পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সততা ও নিষ্ঠা। আশপাশের কারও কারও বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও বা তাদের নাম ভাঙিয়ে সুযোগ-সুবিধা নিলেও প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের কেউ কোনো দুর্নীতিতে জড়াননি। তিনি টানা তিনবার বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে বসেছেন। এর পরও পরিবারের সদস্যরা সরকারের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেওয়া থেকে দূরে থেকেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে এমন বিরল উদাহরণ সম্ভবত দ্বিতীয়টি দেওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা পেরেছেন নিজের পাশাপাশি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে সততার উদাহরণ হিসেবে জাতির সামনে তুলে ধরতে।
শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্য অন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তার লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে—শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সহে না মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে ইত্যাদি।
Leave a Reply